যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লয়েড হত্যার রায় নিয়ে চরম উত্তেজনা

নিউজ ডেস্কঃ কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে গত বছরের মে মাসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে নিহত হন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড। তাঁকে হত্যার অভিযোগে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চোউভিনের বিচারপর্ব এখন অনেকটাই শেষ পর্যায়ে।

বহুল আলোচিত এই মামলায় উভয় পক্ষের জিজ্ঞাসাবাদ ও যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। রায় প্রদানের জন্য মামলাটি এখন জুরিবোর্ডের কাছে। সবকিছু পর্যালোচনা করে মামলার রায় যেকোনো দিন হতে পারে। মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর-নগরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হতে পারে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, এই বিচারের দিকে গুরুত্বের সঙ্গে দৃষ্টি রাখছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মামলার রায় ঘোষণার পর তিনি জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন।

যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এই মামলার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করছে প্রধান প্রধান মার্কিন গণমাধ্যম।

এদিকে নিউইয়র্কসহ বেশ কিছু নগরীতে পুলিশের সব ধরনের ছুটি মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব জেন সাকি বলেন, মামলার রায় ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বক্তব্য দেবেন। তবে কবে রায় আসতে পারে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।

মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর টিম ওয়ালজের সঙ্গে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেন কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউস থেকে আমেরিকার বড় বড় নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নাগরিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এবিসি নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় নাগরিক আন্দোলন শুরু হয় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর। শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ-নৃশংসতার অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় নগরীতে পুলিশে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুলিশি ব্যবস্থার জন্য রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে আনা হয়। আমেরিকার পুলিশ ইউনিয়নগুলোর মধ্যে এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ চলছে।

মার্কিন সমাজ ও পুলিশি ব্যবস্থায় জমে থাকা বিদ্বেষমূলক মনোভাবের বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলনের সংগঠনগুলো এখনো প্রতিবাদমুখর। গত জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারসহ নানা ধরনের নাগরিক আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে বলে মনে করা হয়। নির্বাচনপরবর্তী সময়ে আমেরিকায় বেশ কিছু বর্ণবিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ লোকজনের মৃত্যু হয়। এসব কারণে এ মামলার রায় স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।

মামলার রায় কোন দিকে যাবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। রায়ে সাবেক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার দায় থেকে মুক্তি পেলে নাগরিক আন্দোলনের কর্মীরা মাঠে নামতে পারেন। এ জন্য তাঁদের প্রস্তুতিও রয়েছে। অন্যদিকে, দায়িত্ব পালনের সময় সংঘটিত ঘটনা বা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দায় পুলিশের ওপর বর্তালে তা নিয়েও অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।

প্রেস সচিব জেন সাকি বলেছেন, সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে আমেরিকার জনগণকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করার অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া আছে। লোকজন তাদের এই অধিকার বিনা বাধায় চর্চা করতে পারবে। তিনি আরও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন মনে করেন, লোকজন প্রতিবাদ–সমাবেশ করতেই পারে। কিন্তু এসব প্রতিবাদ–সমাবেশ অবশ্যই যেন শান্তিপূর্ণ থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: