“মাইগ্রেন জনিত মাথাব্যথা : জেনে নিই টুকিটাকি”

ডা: মো: আব্দুল হাফিজ (শাফী):

মাথাব্যথা নিয়ে আমরা অনেকেই সচেতন নই।অন্য  সব রোগের মতো আমরা মাথাব্যথাকে এতোটা  গুরুত্ব দেই না; যতক্ষন না পর্যন্ত এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বত্যয় না ঘটায়। মাইগ্রেন সেই রকমেরই এক মাথাব্যথা।

টেনশন টাইপ মাথাব্যথার মতো মাইগ্রেন এর মাথা ব্যাথা প্রায় প্রতিদিনই হয় না, তবে মাইগ্রেন এটাক করে সাধারণত হঠাৎ করে মাঝেমধ্যে যাকে পিরিয়ডিক এটাক বলে। দেখা যায়, মাসে একবার বা সপ্তাহে একবার বা দু-তিন মাস পর পর এই প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হয়। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে এটা তুলনামূলক বেশী দেখা যায়।

অতিরিক্ত টেনশন/ দুশ্চিন্তা/ অস্থিরতা হতে পারে মাইগ্রেনের কারণ। যারা সবসময় ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে চিন্তাগ্রস্ত থাকেন বা দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তাদের মাঝে মাইগ্রেনজনিত মাথা ব্যাথার  প্রকোপ বেশি লক্ষণীয়। এছাড়া সেরেটোনিন নামক কেমিক্যালের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলেও এই ব্যথা হয়ে থাকে।

এছাড়া যেসব মহিলারা দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করেন তাদের মাঝেও মাইগ্রেনের লক্ষণ বেশি দেখা যায়।

মাইগ্রেনের ব্যথা মাঝারি থেকে জটিল ধরনের হয়। সাধারণত এটি মাথার একটি ভাগে হয়। পুরো মাথা ধরে ব্যথা মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে কম হয়, তবে দীর্ঘ সময় মাথা ব্যাথা স্থায়ী হলে পুরো মাথা ব্যাথা হয়। এই মাথা ব্যাথা ৪ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মনে হয় যে মাথাটা ছিঁড়ে যাবে।

মাইগ্রেনের ব্যথার আরেকটি লক্ষণ হলো, মাথা  ব্যথার সঙ্গে দেখা যায় বমি বমি ভাব, অনেকের বমি হয়। দেখা যায়, এই মাথা ব্যথার সময় আলো অথবা শব্দ এগুলো সহ্য করা যায় না। তাই দেখা যায়, মাইগ্রেন ব্যথা খুব বেশি হলে আক্রান্ত ব্যক্তি একটি অন্ধকার ঘরে, আলো বন্ধ করে শুয়ে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ  করেন।

যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের এই মাথা  ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ২ টি অভ্যাস এড়িয়ে চলাই ভাল। এতে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

পেট খালি না রাখা: দীর্ঘক্ষণ পেট খালি থাকলে মাইগ্রেনের ব্যথা বা সমস্যা শুরু হতে পারে। খাওয়া-দাওয়া অনিয়ম করলে বা এক বেলা খাবার না খেলে মাথাব্যথা করতে পারে। আমরা যা খাই, সে খাবার থেকে শরীর এক প্রকার চিনি তৈরী করে। যেটা ব্রেনের খাদ্য। আপনি না খেলে রক্তের সাথে এই চিনির পরিমাণ কমে যায়। আর সেই কারণে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।এছাড়া মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রচুর পানি পান করুন।কারণ  ডিহাইড্রেশন মাথাব্যথার বড় কারণ।

আবহাওয়া: অতিরিক্ত রোদে ঘোরাঘুরির কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত গরম, অতিরিক্ত আর্দ্রতার তারতম্যে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়তে পারে।

চিকিৎসা ছাড়া দীর্ঘদিন মাইগ্রেনে ভূগলে ডিপ্রেশন এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই এরকম সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে আর সেই মোতাবেক নিয়ম মেনে ঔষধ খেতে হবে। সাধারণত মাইগ্রেনের ব্যথায় পেনকিলার দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ দিন ধরে পেইনকিলার খেলে অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। রোগী নিজে থেকে যদি কোনও পেনকিলার খেতে শুরু করেন, তার পরিণাম আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাবেন না।

লেখক:

ডা: মো: আব্দুল হাফিজ শাফী,

বিসিএস (স্বাস্থ্য),

নাক-কান-গলা বিভাগ,

বিএসএমএমইউ(প্রেষণে), ঢাকা।

এক্স সহকারী রেজিস্ট্রার, সিওমেক হাসপাতাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: