১৬ বছর উইকেটকিপিং করা মুশফিককে অপমান করা হলো : মাশরাফি

স্পোর্টস ডেস্কঃ সীমিত ওভারের ক্রিকেটে উইকেটকিপিং নিয়ে জাতীয় দলে চলছে তুলকালাম। ১৬ বছর ধরে দলকে সার্ভিস দিয়ে যাওয়া মুশফিকুর রহিমকে অনেকেই আর কিপার হিসেবে দেখতে চান না। মুশফিক নিজেও কিপিং ছাড়তে চান না। অন্যদিকে দলে আছে লিটন দাস, নুরুল হাসান সোহানের মতো তরুণ কিপার। যারা খুব ভালো করছে। সমস্যা সমাধানে নিউজিল্যান্ড সিরিজে সোহান-মুশফিকের কিপিং ভাগাভাগি করার তত্ত্ব হাজির করেছেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। এই ‘সমাধানের’ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

গতকাল সোমবার রাসেল ডমিঙ্গোর সংবাদ সম্মেলনের পর দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ম্যাশ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লিখেন, ‘১৬ বছর যে মানুষটা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সার্ভিস দিচ্ছে, তাকে নিয়ে মন্তব্য করার আগে আপনি যত বড় ক্ষমতাধর মানুষ হোন না কেন, একটু জায়গা বুঝে বলা উচিত। মুশফিক কিভাবে জাতীয় দলে এসেছে, তা সবাই জানে। সিম্পলি তার ব্যাটিং দক্ষতা। একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ব ক্রিকেটে শুধু কিপার হিসাবেই খেলা যেত, উদাহরণ ভুরি ভুরি। কিন্তু গিলক্রিস্ট আসার পর সব হিসাব পাল্টে যায়, যার সুত্র ধরে ইন্ডিয়া টিমে দেখেছি রাহুল দ্রাবিড়কেও কিপিং করতে, যাতে দল সুবিধা মতো এক্সট্রা একজন ব্যাটসম্যান বা বোলার খেলাতে পারে।’

তিনি আরও লিখেন, ‘বিশ্ব ক্রিকেটের দুজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটারকে, সেটা আবার নিজ দলের খেলোয়ারকে, আপনি যুদ্ধ করে বাঁচতে বলবেন, সেটা ড্রেসিং রুম পর্যন্ত থাকাই ভালো। অবশ্যই দলের স্বার্থ, সবার আগে দল, দলের আগে কোনো খেলোয়াড় হতে পারে না। কিন্তু যে ক্রিকেটারগুলো দেশের হয়ে খেলতে নামে, তারা কোনো সহানুভূতি নিয়ে নয়, বরং তার শরীরের সর্বোচ্চটুকু নিংড়ে দলে জায়গা পায়। মুশফিকের গল্প আমরা সবাই জানি, তার নিবেদন কী পর্যায়ে। বাংলাদেশের হাজার হাজার উঠতি ক্রিকেটারদের আইডল সে। টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত তারা তাদের মতো করে নেবে, এটাই তো স্বাভাবিক এবং অবশ্যই ভালোর জন্য নেবে। সফল হলে তালি, না হলে গালি, যা সারা বিশ্বেই হচ্ছে।’

দলে এই সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা করছেন মাশরাফি, ‘কে খেলবে, কোন পজিশনে খেলবে, কার রোল কি, এগুলো তো দলের একান্ত পরিকল্পনা, যা ড্রেসিং রুমে শুরু, আবার ড্রেসিং রুমেই শেষ হয়। বাহিরে বলতে গেলে তো খেলোয়ারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় যা, তার স্বাভাবিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে। সোহান সম্ভবত দলের সেরা কিপার। সাথে লিটন, এক সিরিজ গ্যাপে যোগ হলো মুশফিক। এক দলে এত কিপার, এ তো আনন্দের। তা না হয়ে, বের হয় বিষাদ। এতটুকু সামাল দিতে না পারলে তো সমস্যা, যা এক পর্যায়ে দলের ভিতর অদৃশ্য এক বাজে প্রতিযোগিতা চলে আসবে। দলে প্রতিযোগিতা সব সময় দলের সেরাটা বের করে আনে, তবে সেটা সুস্থ হতে হবে। কাউকে আঘাত করে নয়।’

শেষে মাশরাফি লিখেন, ‘আমি শুধু ভাবছি এতে কি সোহানের জন্যও খুব ভালো হলো, যে দুই ম্যাচে সব দেখিয়ে টিকে থাকতে হবে, তাহলে বিগত দুই সিরিজ সে যা করল, তার কি হবে! লিটন কি বলবে? এখন ও তো কিপিং ভুলেই যাবে। মুশফিককে পারফর্ম করতে হবে ১৬ বছর খেলার পর, এটা বলে দেওয়ার কিছু নাই। সে খুব ভালো করেই জানে। বরং বাহিরে এভাবে বললে তার নিবেদনকে অসম্মানিত করা হয়, যা তার প্রাপ্য নয়। সে সেরা ব্যাটসম্যান বলেই ১৬ বছর দেশকে সার্ভিস দিয়েছে। আবার দলের প্রয়োজনে তাকেই কিপিং করতে হতে পারে। তখন যদি সে না বলে, সেটা কি ভালো শোনাবে?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: