আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী ৭ শতাধিক, বহিষ্কার শতাধিক দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন ১১ নভেম্বর

নিউজ ডেস্কঃ আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপের ৭৬৭ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলটির সাত শতাধিক নেতা। ইতিমধ্যে শতাধিক বিদ্রোহীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। কেন্দ্রের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগ বিদ্রোহীদের বহিষ্কার করছে। আগামী কয়েক দিনে বহিষ্কারের এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

কারণ দর্শানোর নোটিশ, বহিষ্কার, ভবিষ্যতে দলীয় পদ-পদবি এবং মনোনয়ন না পাওয়া, দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে কোনো নোটিশ ছাড়াই দল থেকে অব্যাহতি—এসব উদ্যোগ নিয়েও বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমন করতে পারছে না আওয়ামী লীগ। কারণ হিসেবে সাতটি জেলার ১০ জন আওয়ামী লীগ নেতা ইত্তেফাককে জানান, অনেক বিদ্রোহীর পেছনে রয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। এ কারণে কেন্দ্রের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও বিদ্রোহীরা মাঠ ছাড়ছেন না। অন্যদিকে প্রথম ধাপে ২৮৬ ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন শতাধিক। এর মধ্যে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী দলের মনোনীত প্রার্থীদের পরাজিত করেছেন।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই ছয় জনের স্বাক্ষরে নাম প্রস্তাবের রেজুলেশন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তৃণমূলের প্রস্তাব, বিভিন্ন জরিপ রিপোর্ট ও মন্ত্রী-এমপিদের সুপারিশ পর্যালোচনা করে ইউপি নির্বাচনে দল মনোনীত একক চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে অনেক জায়গায় মন্ত্রী-এমপিদের পছন্দের ব্যক্তি মনোনয়নবঞ্চিত হন। এদের অনেকে আবার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। অনেক জায়গায় বিদ্রোহীদের পরোক্ষভাবে মদত দিচ্ছেন কোনো কোনো এমপি। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা ও বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ২০১৬ সালে দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দলের প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা দলীয় নেতাদের সরাসরি বহিষ্কারের ধারা অন্তর্ভুক্ত করে। তারপরও বিদ্রোহী প্রার্থী দমন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহীরাই। অবশ্য এখনো বুঝিয়ে বিদ্রোহীদের মাঠ থেকে সরানোর কাজ করছেন কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা। এতে কাজ না হলে সব বিদ্রোহীকে বহিষ্কার করবে আওয়ামী লীগ। বিদ্রোহী প্রার্থী সংখ্যা বেশি থাকায় ইতিমধ্যে তৃণমূলে প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।

যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী বহিষ্কার হলেন

সারা দেশে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আমাদের গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ১১ জন বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। সদর উপজেলার মোট ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে আওয়ামী লীগের ১২ জন বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার প্রত্যাহারের শেষ দিন গিদারি ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুর রউফ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বাকি ১১ জন বিদ্রোহীকে বুধবার দল তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। অব্যাহতি পাওয়া বিদ্রোহী প্রার্থীরা হচ্ছেন, উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও একই ইউনিয়নের আয়নাল হক, মালিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী খোরশেদ আলম, কুপতলা ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমাম হাসান, সাহাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মওলা, বল্লমঝাড় ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী জুলফিকার রহমান, বাদিয়াখালি ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী আতোয়ার রহমান ও সাফায়েতুল হক, বোয়ালি ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম, কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী মতিয়ার রহমান এবং ঐ ইউনিয়নের নুরুন্নবী সরকার। গাইবান্ধা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় এবং গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড করায় দলের পদ-পদবি থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।

নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে অংশ নেওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল গফুরকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ঐ ইউনিয়নের ১ নম্বর সহসভাপতি সাজ্জাদ হোসেনকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জামালপুরের সদর উপজেলার ১ নম্বর কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন এক যুবলীগ নেতা। বহিষ্কৃত মো. সাইফুল ইসলাম খান সোহেল জামালপুর সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। বুধবার জেলা যুবলীগ তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। বৃহস্পতিবার বিকালে এ সংক্রান্ত প্রেসবিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ২য় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বাইশারী এবং দৌছড়ির ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কুষ্টিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের চার নেতা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ৯ জনকে বহিষ্কার করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় নেতাদের সাময়িক বহিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন। বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতারা হলেন-উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম সেন্টু, শিল্প ও বাণিজ্যক সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সহ-দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম, তালবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান মন্ডল, আমবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারী টুটুল, কুর্শা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহন লাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আসাদুজ্জামান সুমন, উপজেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি কবির হোসেন বিশ্বাস ও সদস্য ইব্রাহিম খলিল।

বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, দলে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চার বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে চার বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীকে। বহিষ্কৃত বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন মো. আকতার কামাল, মো. ওমর ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম ও বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহ।

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন শুরু আগামীকাল

ধামরাই (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, ঢাকার ধামরাইয়ে সোমভাগ ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক মো. আওলাদ হোসেনকে বিরোধিতা পরিহার করে ক্ষমা চেয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক আইয়ুব।

তৃণমূলের চাপে তিন প্রার্থী বদল করেছে আওয়ামী লীগ

তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ মনোনীত অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের নেতারা কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। তৃণমূল নেতারা দল মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই নৌকার মনোনয়ন পেয়ে গেছেন স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান, বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা নব্য আওয়ামী লীগাররা। এসব অভিযোগ মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে বুধবার প্রার্থিতা বদল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে পরদিন বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থী বদলের নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী অভিযোগগুলো যাচাই করে শুক্রবার কয়েক জন প্রার্থী বদল করা হয়। তৃণমূলের চাপে সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সজল মুখার্জী। এর আগে এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনয়ন দিয়েছিল বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী শওকতকে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। ৩ নম্বর তারাপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল ইসলামের পরিবর্তে তিন বারের সফল চেয়ারম্যান ও তারাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ খোকাকে দলীয় চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৫ নম্বর কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান মনজু মিয়ার পরিবর্তে নতুন প্রার্থী হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আজম সরকারকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: