হংকংয়ের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি বাতিলের ঘোষণা যুক্তরাজ্যের

হংকংয়ের সঙ্গে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বহাল থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য।অনতিবিলম্বে এই ঘোষণা কার্যকর করা হবে জানিয়ে ব্রিটিশ সরকার বলেছে, অনির্দিষ্টকাল তা বহাল থাকবে। সোমবার (২০ জুলাই) দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব অভিযোগ করেন, হংকংয়ের ওপর নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন আরোপ করে চীন আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করেছে। তারপরও যুক্তরাজ্য বেইজিংয়ের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চায় বলে মন্তব্য করেন তিনি। সরকারি এই পদক্ষেপের প্রতি সমর্থণ জানিয়েছে দেশটির বিরোধী দল লেবার পার্টি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত কোনও ব্যক্তিকে হংকং অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে আসছিল। একইভাবে হংকংও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে সন্দেহভাজন অপরাধীকে হস্তান্তর করে আসছিল। দীর্ঘ সময় ধরে এই চুক্তি বহাল থাকলেও যুক্তরাজ্যের আশঙ্কা নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দিতে পারে হংকং।

এ বছরের জুনের শেষ দিকে হংকংয়ের জন্য নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রবর্তন করে বেইজিং। এই আইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু অপরাধের বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চীনের হাতে তুলে দিতে পারবে হংকং কর্তৃপক্ষ। সমালোচকেরা বলছেন, এই আইনের কারণে অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থী কর্মীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার সুযোগ পাবে চীন।চীনের ওই পদক্ষেপের পর থেকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। আইনটি কার্যকরের পর হংকংয়ের ৩০ লাখ বাসিন্দাকে নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বেইজিং।

নতুন আইন বেইজিং কিভাবে প্রয়োগ করছে তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব বলেন, ‘আমি কেবল বলতে চাই: যুক্তরাজ্য এবং সারা দুনিয়া পর্যবেক্ষণ করছে।’ চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন’ নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। চীন এবং জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষের কাছে যুক্তরাজ্যের তরফে এসব ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি। পারস্পারিক স্বার্থে যুক্তরাজ্য চীনের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক রাখতে চায় উল্লেখ করে ডোমিনিক রাব বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে সেই লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাজ্য জোরালো চেষ্টা চালানো হবে এবং সরল বিশ্বাস রাখা হবে। তবে আমরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থের সুরক্ষা দেবো, মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়াবো এবং আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার প্রতি চীনকে অনুগত রাখার পক্ষে থাকবো।’

এদিকে হংকংয়ের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি বাতিলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টি। দলটির ছায়া পররাষ্ট্র মন্ত্রী লিসা ন্যান্দি বলেছেন, এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন যুগে প্রবেশ করবে। তিনি বলেন, ‘চীনের মানুষের সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। তবে হংকংয়ের স্বাধীনতা বিলোপ, দক্ষিণ চীন সমুদ্রে চীন সরকারের পদক্ষেপ এবং উইঘুর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভয়াবহ আচরণের কারণে আমাদের এখন ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।’তবে চীন দাবি করেছে, আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখতে বেইজিং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বেইজিংয়ের অভিযোগ, নতুন আইনটি নিয়ে ব্রিটিশ সরকার নৃশংস মধ্যস্ততার চেষ্টা চালাচ্ছে। হংকংয়ের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি বাতিল করা হলে বেইজিং ব্রিটিশ সরকারকে যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখাবে বলেও জানিয়েছে চীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: